(১)
রুশ বিপ্লবের নায়ক লেনিন বলতেন, ‘বিপ্লব কোন ভোজসভা নয়।’
দেশে চলমান আওয়ামী ফ্যাসিজম বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম, বিদ্রোহ না বিপ্লব? কৌতুহল উদ্দীপক রাজনৈতিক এই প্রশ্নের সমাধান হওয়া জরুরী।
স্বাভাবিক অর্থে বিদ্রোহ হলো তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া। রাজনৈতিক বিবেচনায় বিদ্রোহের ফলে সাধারনত ব্যক্তি বা গুটিকয়েক সমষ্টির পরিবর্তন হয়। সমগ্র ব্যবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কোন আকাঙ্খা থাকে না। ব্যাপক জনসম্পৃক্ততার অভাবে নীরবে গলিপথ ধরে বিদ্রোহ সংগঠিত হয় এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সূদুরপ্রসারী উদ্দেশ্যের অভাবে সাফল্য ক্ষনস্থায়ী হয়।
পক্ষান্তরে, বিপ্লব বিস্তীর্ণ রাজপথ কাঁপিয়ে দমকা বাতাসের মত পুরানো বিধি-ব্যবস্থা, ধ্যান- ধারনা ওলট-পালট করার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে।পুরনো জরাজীর্ণ অচলায়তন ভেঙ্গে-চুড়ে শাসক ও শাসনতন্ত্র পরিবর্তনের মাধ্যমে নবরুপে উত্থান হয় বিপ্লবী সরকার।
বিপ্লবের পটভূমি রচনায় বস্তুগত ( objective) অর্থাৎ পরিবর্তন ঘটানোর কারন ও বিষয়গত( subjective) তথা পরিবর্তন পরবর্তী কর্মসূচী সম্বলিত দুইটি রাজনৈতিক উপাদান অপরিহার্য । বস্তুগত ও বিষয়গত গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের ভিত্তিতে বৈপ্লবিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ রাজনৈতিক কর্মী- সমার্থক-শুভানুধ্যায়ীর সরব উপস্থিতির প্রয়োজন হয়। বিপ্লবের কালপর্ব দীর্ঘ , বিপরীত দিকে বিদ্রোহের কালপর্ব নাতিদীর্ঘ।
তবে রাজনৈতিক বা রাষ্ট্র বিপ্লবের সূচনা পর্বে বস্তুগত উপাদানের বিরুদ্ধে অর্থাৎ বিরাজমান অনিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের লক্ষন দেখা দেয় এবং ক্রমান্বয়ে বিদ্রোহ সমূহ সামগ্রিক লড়াইয়ে পরিনত হয়ে শাসকগোষ্ঠীর পতন ঘটে এবং বিপ্লবী সরকার গঠন হয়। পরবর্তীতে বিপ্লবের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিষয়গত উপাদান তথা নতুন শাসনতন্ত্র প্রনয়ন করে পুরানো অচলায়তন ওলট-পালট করে বিপ্লবী কর্মসূচির বাস্তবায়ন পর্ব শুরু হয়।
(২)
আমরা সকলেই জানি এবং বুঝি বাংলাদেশের বৃহত্তর জনপরিসরে জনআকাঙ্খা হলো শুধুমাত্র ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ক্ষমতা পরিবর্তন নয়। বরং বিদ্যমান ফ্যাসিজম ব্যবস্থার অচলায়তন ভেঙ্গে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট নতুন ব্যবস্থার প্রনয়ন করা।
চলমান আন্দোলন-সংগ্রামের শীর্ষ নেতৃত্ব দেশনায়ক তারেক রহমান জন আকাঙ্খার সমর্থনে বারংবার বলেছেন, “আমাদের সংগ্রাম কোন একক রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়।“ তিনি জনগনের কাছে স্পষ্টতঃ অঙ্গীকার করে বলেছেন, “আওয়ামী ফ্যাসিজম বিরোধী আন্দোলন- সংগ্রামে অংশগ্রহনকারী ক্রিয়াশীল দলগুলোকে যুক্ত করে নির্বাচন পরবর্তী একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার কথা।”
প্রথমতঃ এই লক্ষ্য অর্জনে তিনি আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে দাবিকৃত ১০ দফার আলোকে ভোটারবিহীন ও নিশিরাতের ভোটে ক্ষমতাসীন ফ্যাসিষ্ট সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা ও অবৈধ পার্লামেন্ট ভেঙ্গে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
দ্বিতীয়তঃ মুক্ত গনতন্ত্র , মুক্ত রাজনীতি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে হারিয়ে যাওয়া গনতন্ত্র পূনঃপ্রতিষ্ঠা, মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে জনগনের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচন করার অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছেন। বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তনের লক্ষ্যে আগামী বাংলাদেশের রাষ্ট্র গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনার রুপরেখা চলমান লড়াই-সংগ্রামে অংশগ্রহনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত ৩১ দফা প্রস্তাবনা আকারে জনগনের কাছে উত্থাপন করেছেন। এখানে উল্লেখ থাকে যে, দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশমত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ রাজধানীসহ দেশের প্রধান প্রধান শহরে সভা-সেমিনারের মাধ্যমে জনগনের কাছে ১০ দফা এবং ৩১ দফা সম্বলিত দাবি গুলো পরিস্কার করেছেন। সুতরাং সুনিশ্চিত ভাবে বলা যায়, ব্যাপক জন আকাংখার সমর্থনে দেশনায়ক তারেক রহমানের আহবানে অব্যাহত গতিতে এগিয়ে যাওয়া লড়াই-সংগ্রাম কোন অর্থেই বিদ্রোহের আলামত নয় বরং বিপ্লবের ইংগিত বহন করে।।
(৩)
দেশনায়ক তারেক রহমান চলমান আওয়ামী ফ্যাসিজম বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে ঘোষনা করেছেন এবং উপরের আলোচনা অনুযায়ী চলমান ফ্যাসিজম বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম বিপ্লবী কর্মসূচি হিসেবে বিবেচিত। সুতরাং “বিপ্লবের উদ্দেশ্যে চলমান দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ” এই উপপাদ্য প্রমানের জন্য অতীত ইতিহাসের দুইটি পর্ব বিশ্লেষণের দাবি রাখে। আমাদের পূর্বপূরুষরা বৃটিশ পরবর্তী সময়কাল থেকে পাকিস্তান আন্দোলনে সমর্থন এবং সংগ্রামে অংশগ্রহন করে যে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছিলেন তার উদ্দেশ্য কি ছিল – ভারতবর্ষের হিন্দু এলিটদের প্রাধান্য থেকে বের হয়ে মুসলিম এলিটিজমের প্রতিষ্ঠা করা ? তৎকালীন পাক- ভারত উপমহাদেশের অর্থনীতি-রাজনীতির প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উপরের অনুমান সঠিক বলে বিবেচিত হলেও বৃহত্তর রাজনৈতিক দৃষ্টিতে উক্ত অনুমান সংকীর্ণ ও অপরিসর। এইরূপ উদ্যোগ একপ্রকার বিদ্রোহের নামান্তর এবং সূদুরপ্রসারী উদ্দেশ্যের অভাবে সাফল্য ক্ষনস্থায়ী হয়। পাকিস্তান আন্দোলনের ফলাফলের ক্ষেত্রে হয়েছিলও তাই। বিশাল পাক-ভারত উপমহাদেশের গর্ভ থেকে স্বাধীন ও নতুন পাকিস্তান রাষ্ট্র উত্থিত হলেও মাত্র ২৩ বছরের ব্যবধানে পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙ্গে বাংলাদেশ সৃষ্টি করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। বিস্ময়করভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির সূচনাতে অবাঙ্গালী পান্জাবী এলিটের প্রাধান্য থেকে বের হয়ে বাঙ্গালী এলিটিজম প্রতিষ্ঠার বিদ্রোহ ঠিকই সংগঠিত হয়েছিল। আবার একই সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানী দুঃশাসন এবং অর্থনৈতিক শোষনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের আওয়াজ গোটা পূর্ব পাকিস্তানের প্রান্তর থেকে প্রান্তরে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। পাকিস্তানের রাজনীতিতে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পান্জাবী রাজনীতিকগন গনতন্ত্রে বিশ্বাস করত না এবং প্রতিষ্ঠার কোন উদ্যোগ ও দেখা যায়নি। ফলে ৭০’র নির্বাচনী ফলাফল পান্জাবী এলিটরা মানতে চায়নি তাইতো সশস্ত্র যুদ্ধের প্রয়োজন হলো। এই কথা অনস্বীকার্য যে, আমাদের পূর্বপূরুষদের রক্তস্নাত ৭১’র সংগ্রাম-যুদ্ধ শুধুমাত্র বাংলাদেশ নামক ৫৫,১২৬ বর্গমাইলের স্বাধীন সার্বভৌম ভূখন্ডের আবির্ভাব ঘটানো কিংবা পান্জাবী এলিটিজমের প্রাধান্য উৎখাত করে বাঙালী এলিটিজম প্রতিষ্ঠা করার নিছক উদ্দেশ্যে সংগঠিত হয় নাই। এর পটভূমিতে একটি বিপ্লবী ছক ছিল, তাই প্রয়োজন হয়েছিল উত্তাল আন্দোলন- সংগ্রাম এবং রক্তস্নাত সশস্ত্র যুদ্ধের। গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আকাংখা জনগনকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল। ৭১’র স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে জনগনের বিদ্রোহ শুধুমাত্র ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কেন্দ্রীক ক্ষমতার পতনের জন্য হয় নাই। বরং পশ্চিম পাকিস্তানী দুঃশাসন এবং অর্থনৈতিক শোষনের বৈপ্লবিক অবসান ঘটিয়ে পাকিস্তানী রাষ্ট্রের পুরানো মডেলের খোল- নোলচে বদলে নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের উত্থান এবং গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতৃত্ব নির্বাচন করে নব উদ্দীপনায় নতুন গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো বিনির্মান, সর্বোপরি শাসন ও সমাজ ব্যবস্থায় সাম্য , মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচার স্বাধীন দেশের সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করার সূদুর প্রসারী বিপ্লবী উদ্দেশ্যে সংগঠিত হয়েছিল।
(৪)
সুতরাং আমাদের পূর্বপুরুষদের ১৯৭১’র ঐতিহাসিক মহাযজ্ঞকে একইসাথে রাষ্ট্র বিপ্লব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের চটজলদি ক্ষমতার মসনদে আসীন হওয়ার অভিপ্রায়ে ৭১’র বিপ্লবের উদ্দেশ্য পূরণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় এবং বিপ্লবের অপমৃত্যু ঘটে।
ইতিহাসের পাতায় স্বাধীন-সার্বভৌম নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যূদয় হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু জনগনের আশা- আকাংখার প্রতিফলন সম্ভব হয় নাই । অসমাপ্ত বিপ্লবের ন্যায় পুরনো ব্যবস্থা ও ধ্যান ধারনা নিয়ে নতুন বোতলে পুরানো মদের মত শুধু স্বাধীন- সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডটুকু প্রতিষ্ঠিত হলো। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহনকারী সব দল ও মতের সমন্বয়ে বিপ্লবী সরকার বা জাতীয় সরকারের পরিবর্তে গতানুগতিক-স্বাভাবিক বা স্বাধীনতাপূর্ব- পুরানো নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হলো।
সুতরাং স্বাধীনতার ঊষালগ্ন থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কর্তৃত্ববাদী ও গনতন্ত্রপন্থী দুটি ধারা দেখা যায়। কর্তৃত্ববাদী ধারার সূচনা ঘটে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে একদলীয় রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, ইত্যাদি ইতিহাস সবারই জানা।
(৫)
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমেদের মতে “দেশের প্রচলিত সংবিধান ও আইন- কানুনের খেলাপে জবরদস্তিমূলক শাসক বদল হইলে তাকেই বলা হয় রাষ্ট্র বিপ্লব। এই বিপ্লব চলাকালে বা বিপ্লবের শেষে বিপ্লবের নেতারা যে সরকার গঠন করেন, তাকেই বলা হয় বিপ্লবী সরকার।” তিনি তার ‘বেশী দামে কেনা কম দামে বেচা’ গ্রন্থে স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার সম্বন্ধে মজার কথা বলেছেন, “স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার দেশের তৎকালীন আইন অনুসারেই তারা নির্বাচিত হইয়াছিলেন। এই সবই ঘটিয়াছিল মুক্তিযুদ্ধের আগে সুতরাং মুক্তিযুদ্ধটাকে যদি বিপ্লব বলিয়া ধরা হয়, তবু এ সরকারকে বিপ্লবী সরকার বলা চলে না। কারন এই সরকারকে বিপ্লবের সৃষ্টি বলা চলে না ।বরঞ্চ বলা চলে বিপ্লবটাই সরকারে সৃষ্টি।”
বিশিষ্ট লেখক ও অধ্যাপক ডঃ সলিমুল্লাহ খান স্বাধীনতার যুদ্ধের ফলাফলকে বেহাত বিপ্লব ( passive revolution) আখ্যায়িত করে ‘বেহাত বিপ্লব ১৯৭১ ‘ নামক একখানি গ্রন্থে তিনি তাৎপর্যপূর্ণ কথা লিখেছেন। “স্বাধীন হইবার তিন যুগ পরও এদেশ আপনকার পাদুকা পরিয়া দাঁড়াইবার পারিল না। কারণ এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ফল অপরে আত্মসাৎ করিয়াছে। বিপ্লব বেহাত হইয়াছে। ১৯৭১ সনের অপর নাম তাই ‘বেহাত বিপ্লব।”
অর্থাৎ, ডঃ সলিমুল্লাহ খানের মতানুযায়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপ্লবী উদ্দেশ্য আত্মসাৎ বা বেহাত হয়ে গেল । রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমেদে তাই স্বাধীনতা যুদ্ধকে বিপ্লব হিসেবে গন্য করলেও যুদ্ধ পরবর্তী সরকারকে বিপ্লবী সরকার বলতে নারাজ ছিলেন।
(৬)
বর্তমানে আওয়ামী ফ্যাসিজম বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের ফলে চলমান ফ্যাসিজমের অচলায়তন ভেঙে গনতন্ত্র , মানবাধিকার , বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় আন্দোলন- সংগ্রামের আয়োজন কে নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করলে অত্যুক্তি হবে না। একইভাবে আন্দোলন-সংগ্রামে জয়ী হয়ে ব্যাপক পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন রাজনীতি ও নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রনয়নের অনুপ্রেরণা অবশ্যই বিপ্লবী চেতনায় পরিপুষ্ট।
এখন তর্ক হতে পারে আগামী বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দেশনায়ক তারেক রহমানের “বিপ্লবের উদ্দেশ্যে চলমান দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ” শীর্ষক উপপাদ্যে’র তাত্ত্বিক প্রমান সম্ভব হলেও প্রায়োগিক বাস্তবায়ন ইতিহাসের নিরিখে কথামালার রাজনীতিতে পরিনত হবে কিনা ? অথবা ১৯৯০’র ছাত্র-গণঅভ্যূত্থানের মতই শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য বিদ্রোহ-সংগ্রাম-আন্দোলন এবং অতপরঃ পুরনো স্টাইলের নতুন নামের সরকারে পরিগনিত হবে কিনা?
উপরোক্ত তর্কের বিপরীতে কতকগুলো যুক্তি পেশ করা যায়।
প্রথমতঃ বর্তমান ফ্যাসিষ্ট ব্যবস্থাপনায় যেহেতু ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা নেই। বিরোধী দলের নাগরিক অধিকার সমূহ সবসময় মেনে চলা হয় না। আইনের শাসন দুর্বল এবং জনগনের নাগরিক ও শাসনতান্ত্রিক অধিকারের মর্যাদা নেই। তাই এর জন্য প্রয়োজন তীব্র থেকে তীব্রতর উপায়ে ব্যাপক রাজনৈতিক নেতা কর্মীর লড়াই- সংগ্রামর মাধ্যমে ফ্যাসিজম কে পরাভূত করে আইনের শাসন, সংবিধানের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষমতা নির্দিষ্টকরন। প্রয়োজন বাক স্বাধীনতা , সমাবেশের স্বাধীনতা ,ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করা।
দ্বিতীয়তঃ গনতন্ত্রের জন্য শুধু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই যথেষ্ট নয়। শক্তিশালী সিভিল সমাজ ও শক্তিশালী গনমাধ্যম ছাড়া গনতন্ত্রকে সুসংহত করা সম্ভব নয়। গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলো সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ করে। সকল অচলায়তন ভেঙে এক বৈপ্লবিক যুগের সূচনা করাই চলমান বিদ্রোহ-আন্দোলন- সংগ্রামের মহৎ উদ্দেশ্য। যাকে শুধুমাত্র বিদ্রোহ বলে সীমাবদ্ধ করা যায় না। দেশনায়ক রহমানের নেতৃত্বে এক মহৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই বিপ্লব রচিত হচ্ছে। বহু রাজনৈতিক কর্মীর ত্যাগ-শ্রম-রক্ত ও আত্মদানে মহীয়ান এই বিপ্লবের মৃত্যু নেই। কারাগারের সকল প্রাচীর ভেঙে, নির্যাতনের সকল শেকল ছিন্ন করে, রক্ত রাঙা পায়ে আরো বন্ধুর এবং দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। সকল বাধা সাহসের সাথে অতিক্রম করে বিন্ধ্যাচল পর্বত পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। দেশপ্রেম এবং বুকে সাহস নিয়ে পাকা বিপ্লবীদের মত গর্জে উঠতে হবে। পা পিছলে পিছনে পড়ে গেলে শুধুই পা’ই ভাঙ্গে না চড়া মূল্য দিতে হয়।
সুতরাং বিপ্লব কোন ভোজ সভা নয় যে আচার অনুষ্ঠান মান্য করতে হবে।
—————————————————
তানভীর বারী হামিম
প্রচার সম্পাদক
কবি জসীম উদ্দীন হল ছাত্রদল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়